রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ’-এ স্বাক্ষর করেছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাষ্ট্রপতির দপ্তরের এক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এই আদেশের ভিত্তিতেই অনুষ্ঠিত হবে আসন্ন গণভোট, যেখানে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত সংস্কারগুলোর বিষয়ে জনগণের মতামত নেওয়া হবে। কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপে চূড়ান্ত হওয়া এসব প্রস্তাবই অন্তর্ভুক্ত হয়েছে জুলাই সনদে।
এদিকে, আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁর ভাষণেই গণভোটের তারিখ ঘোষণা করা হতে পারে। বিকেল আড়াইটায় বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি), বিটিভি নিউজ ও বিটিভি ওয়ার্ল্ডে তাঁর ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।
ভাষণের আগে তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি ও সম্ভাব্য সময়সূচি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত ২৮ অক্টোবর অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের দুটি বিকল্প প্রস্তাব জমা দেয়।
১. বাস্তবায়ন আদেশ জারি:
সরকার ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ ২০২৫’ নামে একটি আদেশ জারি করবে, যা জুলাই সনদে বর্ণিত সংবিধান সংশোধনের ধারা কার্যকর করবে।
২. গণভোট:
অন্তর্বর্তী সরকার প্রণীত খসড়া বিল জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগের অংশ হিসেবে গণভোটে উপস্থাপন করা হবে।
৩. সংবিধান সংস্কার পরিষদ:
গণভোট-পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদের পাশাপাশি একটি সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন করা হবে, যা সংস্কার কার্য সম্পাদনের ক্ষমতা রাখবে।
৪. সংস্কার কার্য সম্পন্ন:
গণভোটে ইতিবাচক রায় পেলে পরিষদ ২৭০ দিনের মধ্যে সংস্কার কার্য শেষ করবে। সময়ের মধ্যে না হলে গণভোটে অনুমোদিত বিল স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে।
১. বাস্তবায়ন আদেশ জারি:
‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ ২০২৫’ নামে একইভাবে সরকার একটি আদেশ জারি করবে, যার খসড়া কমিশন প্রস্তাবে সন্নিবেশিত রয়েছে।
২. গণভোট:
আদেশ এবং তার তফসিলে অন্তর্ভুক্ত প্রস্তাবগুলো গণভোটে উপস্থাপন করা হবে, যাতে জনগণ সরাসরি মতামত দিতে পারেন।
৩. সংবিধান সংস্কার পরিষদ:
গণভোট-পরবর্তী জাতীয় সংসদের নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে একটি সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠিত হবে, যা সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
৪. সময়সীমা:
পরিষদ প্রথম অধিবেশন শুরু হওয়ার পর থেকে ২৭০ দিনের মধ্যে সংবিধান সংস্কার সম্পন্ন করবে। কাজ শেষ হলে পরিষদের কার্যক্রম সমাপ্ত হবে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গণভোটে উপস্থাপনের জন্য একটি নির্দিষ্ট প্রশ্ন প্রস্তাব করেছে—
“আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং উহার তফসিল-১-এ সন্নিবেশিত সংবিধান সংস্কার প্রস্তাবসমূহের প্রতি আপনার সম্মতি জ্ঞাপন করিতেছেন?”
রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো। এখন জাতির দৃষ্টি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণের দিকে, যেখানে গণভোটের তারিখ ও বাস্তবায়ন রূপরেখা স্পষ্ট হতে পারে।