|
প্রিন্টের সময়কালঃ ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৬:২৮ অপরাহ্ণ     |     প্রকাশকালঃ ২২ নভেম্বর ২০২৫ ০২:৩১ অপরাহ্ণ

যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা অনুকরণে ইউক্রেনের সামনে কঠিন দ্বিধা: ‘মর্যাদা’ নাকি মিত্র হারানোর ঝুঁকি – জেলেনস্কি


যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা অনুকরণে ইউক্রেনের সামনে কঠিন দ্বিধা: ‘মর্যাদা’ নাকি মিত্র হারানোর ঝুঁকি – জেলেনস্কি


যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত যুদ্ধ–সমাপ্তির পরিকল্পনা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। পরিকল্পনাটিতে রাশিয়ার কঠোর দাবি অন্তর্ভুক্ত থাকায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইতোমধ্যে এটিকে স্বাগত জানিয়েছেন।
কিয়েভ থেকে এএফপির বরাতে এ তথ্য জানা গেছে।

 

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনকে চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য অত্যন্ত সীমিত সময় — এক সপ্তাহেরও কম — বেঁধে দিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে জেলেনস্কি স্পষ্ট করেন, দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়ে কোনো সমঝোতা তিনি করবেন না, যদিও তাতে যুক্তরাষ্ট্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ মিত্রকে হারানোর ঝুঁকি রয়েছে।
 

পুতিন মন্তব্য করেন, এই পরিকল্পনা “চূড়ান্ত শান্তির ভিত্তি” হতে পারে। একই সঙ্গে সতর্ক করে দেন—ইউক্রেন আলোচনায় না বসলে রাশিয়া আবারও নতুন অঞ্চল দখল করবে। বিশেষ করে কুপিয়ানস্ক শহরের উদাহরণ টেনে তিনি হুঁশিয়ারি দেন। তবে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী জানিয়েছে, কুপিয়ানস্ক এখনো তাদের নিয়ন্ত্রণে।


যুক্তরাষ্ট্রের ২৮ দফা পরিকল্পনার মূল শর্তসমূহ

  • ইউক্রেনকে কিছু ভূখণ্ড ছেড়ে দিতে হবে

  • সেনাবাহিনী উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে ৬ লাখের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে

  • ন্যাটোতে যোগ না দেওয়ার অঙ্গীকার

  • ভূখণ্ডে কোনো ন্যাটো সেনা মোতায়েন না করা

এর বিপরীতে পাওয়া যাবে:

  • অনির্দিষ্ট “নিরাপত্তা নিশ্চয়তা”

  • যুদ্ধ-পরবর্তী পুনর্গঠনের অর্থ, যা বিদেশে জব্দকৃত রুশ সম্পদ থেকে আসবে

এখানে রাশিয়া লাভ করবে:

  • নতুন ভূখণ্ড

  • বৈশ্বিক অর্থনীতিতে পুনঃঅংশগ্রহণের সুযোগ

  • জি–৮-এ ফেরার সম্ভাবনা


জেলেনস্কির প্রতিক্রিয়া ও ইউরোপের উদ্বেগ

জেলেনস্কি জানান, তিনি বিকল্প প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন এবং যুক্তরাষ্ট্রকে বোঝানোর চেষ্টা করবেন। পাশাপাশি তিনি জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের নেতাদের সঙ্গে জরুরি আলোচনায় বসেন, কারণ প্রক্রিয়া থেকে ইউরোপকে বাদ দেওয়ায় ইউরোপীয় দেশগুলো উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে।
 

ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির নেতারা ফোনালাপে ইউক্রেনকে তাদের “অটল ও পূর্ণ সমর্থন” পুনর্ব্যক্ত করেন।


ট্রাম্পের মন্তব্য

হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের তিনি বলেন:

“তাকে (জেলেনস্কি) এটা মেনে নিতেই হবে। যদি না করে, তবে যুদ্ধ চালিয়ে যাক। শেষ পর্যন্ত তাকে কিছু একটা মেনে নিতেই হবে।”

চুক্তির সময়সীমা আনুষ্ঠানিকভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী বৃহস্পতিবার। যদিও ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, প্রয়োজনে সময় কিছুটা বাড়তে পারে।
 

হোয়াইট হাউস জানিয়ে দিয়েছে, ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানোর সময় দেওয়া হয়েছে।


ভেতরে ভেতরে ইউক্রেনের জনমতও বিভক্ত

কিয়েভের সাধারণ মানুষের মধ্যে মতবিভেদ দেখা দিয়েছে। কেউ মনে করছেন, আলোচনায় বসে সুবিধাজনক অবস্থান আদায় করা উচিত; অন্যরা এটিকে সরাসরি আত্মসমর্পণ হিসেবে দেখছেন।
৪১ বছর বয়সী দর্জি ইয়ানিনা বলেন:

“এই প্রস্তাব থেকে কিছুই হবে না। যুদ্ধ চলবেই। আমরা বা রাশিয়া কেউই ছাড় দেবে না।”


জেলেনস্কির দৃঢ় অবস্থান

তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার আক্রমণের সময়ও তারা দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেননি।

“তখনও আমরা ইউক্রেনের সঙ্গে বেইমানি করিনি, এখনো করব না। আমরা যুক্তি উপস্থাপন করব, বোঝাব এবং বিকল্প প্রস্তাব দেব।”

তার কার্যালয় জানিয়েছে, জেলেনস্কি শিগগিরই ট্রাম্পের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক করার পরিকল্পনা করছেন।


শেষ কথা

জেলেনস্কি বলেন,

“এখন আমাদের ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন সময়। চাপ সবচেয়ে বেশি। ইউক্রেনকে হয় মর্যাদা হারাতে হবে, নয়তো গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হারানোর ঝুঁকি নিতে হবে।”


পরিস্থিতি এখন অত্যন্ত সূক্ষ্ম—একদিকে ভূখণ্ড ও সার্বভৌমত্ব, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক সমর্থন ধরে রাখার চাপ। যুদ্ধ শেষের প্রস্তাবটি তাই শান্তি নয়, বরং কূটনৈতিক ও কৌশলগত সংকটের নতুন অধ্যায় তৈরি করেছে।

সূত্র: বাসস


সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির     |     প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ   +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ   +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫