তিন দশক পর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ২৫টি পদের মধ্যে ২০টিতেই জয়ী হয়েছে শিবির-সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’। বাকি আসনগুলোর মধ্যে ২টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং ৩টিতে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ জয় পেয়েছে। স্বতন্ত্র প্যানেলের আব্দুর রশিদ জিতু সহ-সভাপতি (ভিপি) এবং শিবির-সমর্থিত মাজহারুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদক (জিএস) নির্বাচিত হয়েছেন।
বাংলাদেশের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে জাহাঙ্গীরনগরের ছাত্ররাজনীতি সবসময়ই গুরুত্ববহ। মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা এখানে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। তবে ১৯৯২ সালে ছাত্রনেতা হাবিবুর রহমান কবির হত্যার পর থেকে শিবির কার্যত নিষিদ্ধ হয়ে যায়। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় কঠোর দমননীতি তাদের কর্মকাণ্ডকে আরও সীমিত করে। তবু গোপনে ছাত্রলীগের ছায়ায় টিকে থেকে নিরপেক্ষ শিক্ষার্থীদের আস্থা আদায় করেছে তারা। বিএনপির আমলেও তাদের একটি অংশ বিএনপির সঙ্গে মিশে গিয়েছিল।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, শিবিরের এ বিজয় হঠাৎ আসেনি, বরং দীর্ঘ পরিকল্পনা ও সংগঠিত নেটওয়ার্কের সুফল। তারা পাঁচটি মূল কারণ উল্লেখ করেছেন—
কৌশলী ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা
নব্বইয়ের দশক থেকে গোপনে সংগঠন চালিয়ে গিয়ে ধীরে ধীরে প্রভাব বিস্তার করেছে শিবির। ছাত্রলীগের আধিপত্যকালেও নিজেদের অস্তিত্ব ধরে রেখেছে।
গণরুম সংস্কৃতির বিরোধিতা
নতুন শিক্ষার্থীদের গণরুমে রাখা ও জোর করে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে টেনে নেওয়ার বিরোধিতা করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আস্থা অর্জন করেছে।
বিকল্প শক্তি হিসেবে আবির্ভাব
শিবির দাবি করেছে, ছাত্রলীগ ও ছাত্রদল দুই দলই একই ধরনের চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও জবরদস্তিমূলক রাজনীতিতে জড়িত। নিজেদের বিকল্প শক্তি হিসেবে উপস্থাপন করে শিক্ষার্থীদের সমর্থন পেয়েছে।
নারী শিক্ষার্থীদের সক্রিয় সম্পৃক্ততা
ছাত্রীসংস্থার মাধ্যমে নারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে কার্যক্রম জোরদার করেছে শিবির। নারী প্রার্থী সামনে এনে নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে।
গণঅভ্যুত্থানে ভূমিকা
সাম্প্রতিক জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছে শিবির। হল সংস্কার, অনুষ্ঠান আয়োজন, সহায়তা কর্মসূচি—সব মিলিয়ে শিক্ষার্থীদের আস্থা অর্জন করেছে তারা।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, জাকসুতে শিবিরের এই জয় শুধু ক্যাম্পাস রাজনীতিতেই নয়, বরং জাতীয় ছাত্ররাজনীতির ভবিষ্যৎ চিত্রেও বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।